নানকু ধোপার গপ্পো
বেশ ভালই কাটছিল। বাড়ি থেকে সোজা কম্পাউন্ডের গেট অবধি মুরাম বেছানো লাল এক ফালি পথ। গেটের দুপাশে লম্বা ঘন বাঁশের ঝাড়। বড়রা বলতেন সেটায় নাকি এক মস্ত সাপ থাকে - বাস্তু সাপ, মারতে নেই। তাকে নাকি একবার অন্য একটি সাপের সঙ্গে জড়াজড়ি করে পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। বড়রা বলতেন পূণ্য করলে দেখা যায়।তা আমাদের তো তখন পূণ্য করার বয়স হয়নি, তাই এটা শোনা কথাই রয়ে গেছে।
গেটের সামনে পিচের রাস্তাটা একদিকে গেছে শহরের দিকে আর অন্য দিকে নূর্রা গ্রাম, ছাড়োয়া ড্যাম। রাস্তাটা ছাওয়া শিরিশ ও শাল গাছে। আলো আঁধারিতে সর্বদাই বেশ গা ছমছমে পরিবেশ।
সকাল হতেই নূর্রা গ্রাম থেকে একে একে আসত সব্জিওয়ালিরা, মাথায় হরেক তরিতরকারির পশার, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বোনা দাঁড়িপাল্লা দুলছে কাঁধের দূপাশে। ছাড়োয়া ড্যাম থেকে জল ছেঁচে মেছুনিরা ধরে আনতো ভাতুয়া মাছ, শালপাতার দোনায় ভরে। শুধু ভেজে শুকনো ভাতে প্রথম পাতে সে মাছ অমৃত।
স্নান পর্বের ঠিক আগে আসতো নাপতিনি দিদিরা। টুকড়িরতে ঝামা পাথর, নরুন ও আলতা। শুরু হত মায়েদের পেডিকেয়োর। ফরসা পায়ে লাল আলতা, মায়েদের এই মোহিনী রূপ দেখে আমরা মুগ্ধ। মাসের যেকোন নির্দিষ্ট দিনে নাপিত আসত। বড় ভয়াবহ সে দিন। উঁচু চেয়ারে বসিয়ে আমাদের ঘাড়ে খবরের কাগজের এক চোঙা বসিয়ে শুরু হত তার অত্যাচারের পালা।এই বুঝি দেয় ঘ্যাঁচ করে কানটা কেটে, আমরা ভয়ে কাঠ।
নানকু ধোপার বয়েস যে কত তা বোধহয় কেউই জানত না। জ্ঞান হওয়া অবধি আমরা তাকে দেখে এসেছি এক পা টেনে টেনে ধীরে ধীরে গেট খুলে আসতে। পেছন পেছন আসতো তার ধুসর রঙের গাধা। পীঠে তার বিশাল কটা কাপড়ের বোঁচকা, তার দুলকি চালের তালে তালে দুলছে। নানকু যখন কাপড়ের আদানপ্রদানে ব্যাস্ত, তার গাধাটি তখন পরম নিস্পৃহ ভাবে তার খুঁটির চারিপাশে ঘাস চিবুতো। এইটা আমাদের ভারী আমোদের ব্যাপার ছিল। তাই নানকু আসার অপেক্ষায় আমরা হাঁ করে বসে থাকতাম। তবে গাধাটাই যে নানকুর পায়ে কামড় বসিয়ে তাকে খোঁড়া করে দিয়েছে, এটা জানা যাবত্ আমরা তাকে এড়িয়েই চলতাম।
হঠাৎ সব পাল্টে গেল। বাবার বদলির সাথে সাথে শুধু জায়গাই বদলালো না, জানা জগতটাই পাল্টে গেল। নতুন স্কুল আর খেলাধুলোর মধ্যে সেই পুরনো নির্জন রাস্তাটা একটু একটু করে হারিয়ে গেল কোথায় যেন। বড় হয়ে গেলাম।
আচমকা একদিন হাঁটাপথে স্কুল থেকে ফিরছি, দেখি দুলকি চালে চলেছে এক গাধা, পীঠে তার কাপড়ের বোঝা। পেছনে ছড়ি হাতে খুঁড়িয়ে চলেছে নানকু ধোপা, পরনে সেই নোংরা আধা ধুতি। আমাকে দেখে একগাল হেঁসে জানাল সেও নতুন শহরে চলে এসেছে আর শিগ্গিরই আমাদের বাড়ি আসবে।
হারানো ছেলেবেলা আর বড় হয়ে যাওয়ার দিনগুলোর মধ্যে নানকু ধোপা আর তার গাধা আজও সাঁকোর কাজ করে চলেছে।
গেটের সামনে পিচের রাস্তাটা একদিকে গেছে শহরের দিকে আর অন্য দিকে নূর্রা গ্রাম, ছাড়োয়া ড্যাম। রাস্তাটা ছাওয়া শিরিশ ও শাল গাছে। আলো আঁধারিতে সর্বদাই বেশ গা ছমছমে পরিবেশ।
সকাল হতেই নূর্রা গ্রাম থেকে একে একে আসত সব্জিওয়ালিরা, মাথায় হরেক তরিতরকারির পশার, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বোনা দাঁড়িপাল্লা দুলছে কাঁধের দূপাশে। ছাড়োয়া ড্যাম থেকে জল ছেঁচে মেছুনিরা ধরে আনতো ভাতুয়া মাছ, শালপাতার দোনায় ভরে। শুধু ভেজে শুকনো ভাতে প্রথম পাতে সে মাছ অমৃত।
স্নান পর্বের ঠিক আগে আসতো নাপতিনি দিদিরা। টুকড়িরতে ঝামা পাথর, নরুন ও আলতা। শুরু হত মায়েদের পেডিকেয়োর। ফরসা পায়ে লাল আলতা, মায়েদের এই মোহিনী রূপ দেখে আমরা মুগ্ধ। মাসের যেকোন নির্দিষ্ট দিনে নাপিত আসত। বড় ভয়াবহ সে দিন। উঁচু চেয়ারে বসিয়ে আমাদের ঘাড়ে খবরের কাগজের এক চোঙা বসিয়ে শুরু হত তার অত্যাচারের পালা।এই বুঝি দেয় ঘ্যাঁচ করে কানটা কেটে, আমরা ভয়ে কাঠ।
নানকু ধোপার বয়েস যে কত তা বোধহয় কেউই জানত না। জ্ঞান হওয়া অবধি আমরা তাকে দেখে এসেছি এক পা টেনে টেনে ধীরে ধীরে গেট খুলে আসতে। পেছন পেছন আসতো তার ধুসর রঙের গাধা। পীঠে তার বিশাল কটা কাপড়ের বোঁচকা, তার দুলকি চালের তালে তালে দুলছে। নানকু যখন কাপড়ের আদানপ্রদানে ব্যাস্ত, তার গাধাটি তখন পরম নিস্পৃহ ভাবে তার খুঁটির চারিপাশে ঘাস চিবুতো। এইটা আমাদের ভারী আমোদের ব্যাপার ছিল। তাই নানকু আসার অপেক্ষায় আমরা হাঁ করে বসে থাকতাম। তবে গাধাটাই যে নানকুর পায়ে কামড় বসিয়ে তাকে খোঁড়া করে দিয়েছে, এটা জানা যাবত্ আমরা তাকে এড়িয়েই চলতাম।
হঠাৎ সব পাল্টে গেল। বাবার বদলির সাথে সাথে শুধু জায়গাই বদলালো না, জানা জগতটাই পাল্টে গেল। নতুন স্কুল আর খেলাধুলোর মধ্যে সেই পুরনো নির্জন রাস্তাটা একটু একটু করে হারিয়ে গেল কোথায় যেন। বড় হয়ে গেলাম।
আচমকা একদিন হাঁটাপথে স্কুল থেকে ফিরছি, দেখি দুলকি চালে চলেছে এক গাধা, পীঠে তার কাপড়ের বোঝা। পেছনে ছড়ি হাতে খুঁড়িয়ে চলেছে নানকু ধোপা, পরনে সেই নোংরা আধা ধুতি। আমাকে দেখে একগাল হেঁসে জানাল সেও নতুন শহরে চলে এসেছে আর শিগ্গিরই আমাদের বাড়ি আসবে।
হারানো ছেলেবেলা আর বড় হয়ে যাওয়ার দিনগুলোর মধ্যে নানকু ধোপা আর তার গাধা আজও সাঁকোর কাজ করে চলেছে।
Comments
Post a Comment